এস,এম, রফিক ঃ
আলীশাহান চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়িয়ে চিরুনিটিকে টেবিলের কাছে আনতেই দেখতে পেল যে,
টেবিলের উপর পড়ে থাকা টুকরো কাগজগুলোকে চিরুনিটি আকর্ষণ করছে। এরকম হওয়ার কারণ : হল স্থির তড়িৎ। চিরুনিটি চুলের সাথে ঘষা লেগে তড়িতাহিত হয়েছে। ফলে তা কাগজের টুকরাটিকেও আধান স্থানান্তর দ্বারা তড়িতাহিত করেছে। চলো এবার স্থির তড়িৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
তড়িৎগ্রস্থ বা আহিত হওয়া বলতে আমরা কী বুঝি?
স্থির তড়িৎ
আমরা দেখেছি যে, দুটি বস্তুর পারস্পরিক ঘর্ষণের ফলে আধানের উদ্ভব হয়। আবার আহিত বস্তুকে অনাহিত বস্তুর সংস্পর্শে আনলে অনাহিত বস্তুটি আহিত হয়। কিন্তু অনাহিত বস্তুকে আহিত বস্তুর সংস্পর্শে না এনে শুধু কাছাকাছি নিয়ে এলেও এটি আহিত হয়। তড়িৎ আবেশের জন্য এরকম হয়।
রাবারের হাতল বিশিষ্ট একটি শুকনো কাচদণ্ডকে রেশম দিয়ে ভালো করে ঘষে এর এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত একটি অনাহিত পরিবাহক দণ্ড প্রান্তের নিকটে আনলে, পরিবাহকের মুক্ত ইলেকট্রনগুলো কাচদণ্ডের ধনাত্মক আধান দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে প্রান্তে সরে আসে। ফলে সে প্রান্তে ইলেকট্রন ঘাটতি সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ একপ্রান্ত ধনাত্মক আধানে আহিত হয় এবং অপর প্রান্ত ঋণাত্মক আধানযুক্ত হয়।
আধান সংগ্রাহক একটি অপরিবাহী হাতলের প্রান্তে লাগানো ক্ষুদ্র ধাতব পাত বা বল দিয়ে প্রান্ত থেকে কিছু আধান সংগ্রহ করে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এর প্রকৃতি নির্ণয় করলে, উপরিউক্ত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হবে। এখানে নতুন কোনো আধান উৎপন্ন হয় না। আহিত কাচদণ্ডের উপস্থিতির কারণে সমপরিমাণ বিপরীত জাতীয় আধানপৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে সরে গেছে মাত্র।
যতক্ষণ কাচদণ্ডটি ঐ পরিবাহীর কাছে থাকবে ততক্ষণ বিপরীত আধান এভাবে পৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে অবস্থান করবে।
তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র
যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুতে আধানের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি নির্ণয় করা যায় তাকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এই যন্ত্রে একটি পিতল বা অন্য কোনো ধাতব দণ্ড এর উপরে একটি ধাতব চাকতি বা গোলক আটকানো থাকে দণ্ডের নিচের প্রান্তে দুটি হালকা সোনার পাত সংযুক্ত থাকে।
পাত দুটি সোনার বদলে অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য কোনো হালকা ধাতুরও হতে পারে। পাতসহ দণ্ডের নিচের অংশ অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি ছিপি এর মধ্য দিয়ে একটি কাচ পাত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। যন্ত্রটি কাচ পাত্রের ভিতরে থাকায় বায়ু প্রবাহ এর ক্ষতি করতে পারে না।
(+) চিহ্নিত অংশে ক্লিক করে জেনে নাও বিস্তারিত!
কুলম্বের সূত্র
আমরা দেখলাম, দুটি বিপরীত জাতীয় আধান পরষ্পরকে আকর্ষণ করে, দুটি সমজাতীয় আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। দুটি আধানের মধ্যবর্তী এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণের বলের মান নির্ভর করে-
১. আধান দুটির পরিমাণের উপর।
২. আধান দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর।
৩. আধান দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপর।
পৃথিবী বা ভূমির বিভব শূন্য
পৃথিবী একটি তড়িৎ পরিবাহক। কোনো আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। পৃথিবী এত বিরাট যে, এতে আধান যোগ-বিয়োগ করলে এর বিভবের পরিবর্তন হয় না। যেমন, সমুদ্র থেকে পানি তুলে নিলে বা সমুদ্রে পানি ঢালা হলে এর পানি তলের কোনো পার্থক্য হয় না। পৃথিবী বিভিন্ন বস্তু থেকে প্রতিনিয়ত আধান গ্রহণ করে আবার সাথে সাথে অন্য বস্তুকে আধান সরবরাহও করে, ফলে পৃথিবীকে আধানহীন মনে করা হয়। কোনো স্থানের উচ্চতা নির্ণয়ের সময় সমুদ্রের উপরিতলের উচ্চতাকে যেমন শূন্য ধরা হয় তেমনি বিভব নির্ণয়ের সময় পৃথিবীর বিভবকেও শূন্য ধরা হয়।
শূন্য, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিভব
কোনো আধানহীন পরিবাহকের বিভবকে শূন্য ধরা হয়। কোনো আহিত পরিবাহককে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে তার বিভবও শূন্য হয়।
কেননা, সংযুক্ত অবস্থায় পৃথিবী ও পরিবাহক একত্রে একটি পরিবাহকে পরিণত হয়। ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ধনাত্মক আর ঋণাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ঋণাত্মক।
বিভবের একক ভোল্ট
তড়িৎ ধারক
ধারকত্ব বজায় রাখার জন্য উদ্ভাবিত যান্ত্রিক কৌশলই ধারক। কোনো উৎস থেকে যেমন তড়িৎ কোষ থেকে ধারক শক্তি সঞ্চয় করে তা পুনরায় ব্যবহার করা হয়। যে কোনো আকৃতির দুটি পরিবাহকের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো অন্তরক পদার্থ। যেমন- বায়ু, কাচ, প্লাস্টিক ইত্যাদি স্থাপন করে ধারক তৈরি করা হয়।
Comments
Post a Comment