এস,এম, রফিকঃ
আজ রফিক ও শিরিন এর বাসর রাত।পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে হয়েছে। রাত ১২:৩০ মিনিট। রফিক বাসর ঘরে আসলো সবাই কে বিদায় জানিয়ে। শিরিন খাট থেকে নেমে রফিক এর পা ছুয়ে সালাম করলো। রফিক শিরিন কে উঠিয়ে খাটের উপর বসাল।রফিক, শিরিন কে বলল “আজ আমাদের বাসর রাত। সবার মতই আমাদের জীবনেও বহু প্রতিক্ষিত এই রাত। আজ এই শুভক্ষনে আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই আশা করি মনযোগী হয়ে শুনবে। কাল কেও তুমি শুধু একটা মেয়ে ছিলে। আজকে তুমি কারো স্ত্রী, কারো সংসারের বউ। কারো ভাবি, কারো জা,কারো চাঁচি, কারো মামী। আজ থেকে তোমার অনেক দায়িত্য বেড়ে গেছে। যেহেতু আমরা পরিবারের কথা মত বিয়ে করেছি তাই হয়তো একে অপরকে জানার সময় কম পেয়েছি। তবুও কিছু কথা……
আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রী এবং আমি তোমার স্বামী। যেহেতু আমাকে তোমার বর হিসেবে মেনে নিয়েছি তাই মনে করছি আমাকে তোমার যোগ্য মনে করেছ। আর আমাকে যদি তোমার যোগ্য করে কেউ গড়ে তোলে তারা হল আমার আব্বু আম্মু। আশা করি তুমি তাদের কে সম্মান দিয়ে চলবে।তাদের কে নিজের আব্বু আম্মু মনে করবে। তারা আমাকে তোমার যোগ্য করেছে তার মানে তারা আমার থেকে অনেক বেশি যোগ্য তাই তারা বয়সের কারনে হয়তো রাগারাগি করতে পারে। তখন তুমি তাদের সামনে মাথা নত রেখে নরম স্বরে কথা বলবা। কারন ” কখনো কখনো তোমার মুখটা বন্ধ রাখতে হবে। গর্বিত মাথাটা নত করতে হবে এবং স্বীকার করে নিতে হবে যে তুমি ভুল। এর অর্থ তুমি পরাজিত নাও, এর অর্থ তুমি পরিণত এবং শেষ বেলায় জয়ের হাসিটা হাসার জন্য ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
যদি তুমি তাদের রাগের সময় ভাল ব্যবহার কর তাহলে তারা আর কখনই তোমার সাথে রাগবে না। যদি তুমি আব্বু আম্মুকে মন থেকে ভালবাসো তাহলে তারা তোমাকে অনেক দু’আ করবে যা অমুল্য।<br>
তোমাকে রান্না করতে হবে। আম্মু যখন রান্না করবে তখন তুমি আম্মু কে গিয়ে বল যে আম্মু আমি রান্না পারি না আমাকে শিখাবেন?? আম্মু খুশি হবে।
তোমাকে রান্না করতে হবে না তখন তবু খুশি থাকবে।বিকেলবেলা একটু চা বানিয়ে তাদের কে দিয়ে আসলে তারা অনেক খুশি হবে তোমার উপর।
শুনেছি সব ভাবিরা নাকি ননদ জা দের কে দেখতে পারে না। তুমি এই ধারনা পাল্টে দিবা। আমার বোন একটি কিছুদিন পর হয়তো আসবে,থাকবে এক দুইদিন দিন। তখন তাকে নিজের বোন মনে করে আদর কর যেন পরের বার তোমার টানেই আসে আবার।
তুমি হয়তো জানো না যে একবার আমি অসুস্থ হইছিলাম এবং আমার আব্বু আম্মু ছিল না। আমার বোন সারারাত আমার মাথার পাশে না ঘুমিয়ে সেবা করেছিল এখন ভাবো তুমি তাদের কে কেমন ভালবাসবে?
আমার বড় ভাই আছে যে আমার চাওয়ার আগেই আমার অভাব পুরন করছে আশা করি তুমি তাকে নিজের ভাইয়ের মত দেখবে। আমার ছোটো ভাই আছে।ও সবার অনেক আদরের। তুমি তাকে নিজের ভাইয়ের মত দেখবে।
যদি বড় ভাইয়ার কাছে কিছু আবদার কর তাহলে তিনি তোমার উপর খুশি হবে।
আমার ভাই এবং বোনের বাচ্চাকাচ্চা আছে । তাদের কে আদর করবে ।
ভালবাসা দানে বাড়ে কমে না। যতযত ভালবাসা দিবে সবাই তেমন ভালবাসা তোমাকে দিবে। সবাইকে ভালবাসবে। আর তুমি যদি এতকিছু কর তাহলে আমি নিশ্চয় তোমাকে খারাপ রাখতে চাইব না?
আর একটা মেয়ের কাছে স্বামীর সুখের চেয়ে বড় কিছু নেই। এমন কিছু করবে যেন এই ঘর টাকে দুনিয়ার জান্নাত মনে হয়।
প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বা। তুমি অনেক রুপসী কিন্তু সেটা সবার জন্য নয়। তাই বাইরে সংযত হয়ে চলাফেরা করবে। তোমার কিছু বলার থাকলে বল।
শিরিন মাথা উঠেই রফিক কে দেখে কাঁদছে।
রফিক বললঃ কাঁদছ কেন? শিরিন বলল জীবনে কাউকে বলিনি আজ বলছি “আমি তোমাকে ভালবাসি ” আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার তোমার মত কাউকে জীবনে সঙ্গি করে পাওয়া।
রফিক বলল আমিও তোমাকে ভালবাসি। কথা বলতে বলতে আযান দিয়ে দিল, রফিক বললঃ তুমি নামাজ পরে ঘুমাতে যাও, আমি মসজিদে গিয়ে নামাজ পরে আসতেছি।
পরের দিন থেকে শুরু হল এক শান্তির সংসার। আমার আব্বু আম্মু যেন বউ পায়নি পেয়েছে একটা মেয়ে।
আমাকে বাদ দিয়ে সারাদিন বউকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে বাড়ির সবাই। আমিও কিছু বলিনা । দিন গেলে রাত টা তো আমার।
Comments
Post a Comment