Skip to main content

বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে তারের সাইজ নির্ণয় করবে কিভাবে?

এস,এম,রফিক ঃ

ক্যাবলের বা তারের সাইজ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে অনেক মতবেদ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে ক্যাবল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ক্যাটালগ দেখলেই হয়ে যায় আবার অনেকেই সিলেকশন পদ্ধতিকে জটিল মনে করেন। এই লেখাতে যতটা সম্ভব আমি খুব সহজে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
এখন আমরা লো-ভোল্টেজের ক্ষেত্রে বা বাসা-বাড়ির তারের সাইজ নির্ণয় সম্বন্ধে জানবো। এটা কয়েকটা ধাপ অবলম্বন করে আমরা করবো।
লোড কারেন্ট নির্ণয়
প্রথমে আমাদেরকে লোড কারেন্ট বের করে নিতে হবে। আমি আপনাদেরকে সহজভাবেই দেখানোর চেষ্টা করবো কি করে লোড কারেন্ট বের করবেন। এখন আমরা একটা বাসার বিল্ডিং এর ওয়্যারিং নিয়ে হিসাব করবো।
ধরি ঐ বিল্ডিং-এ বা বাসায় সর্বমোট পাওয়ার ৫৩০০ ওয়াট। অর্থাৎ প্রতিটি লোডের ওয়াট যোগ করে পেয়েছি। আমরা এটাও জানি 
বাসাবাড়িতে প্রতিনিয়ত লোডের পরিমাণ বেড়ে থাকে কারন প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়। সুতারাং দিনে দিনে পাওয়ার বাড়তে থাকবে। তাই ভবিষ্যতে লোডের কথা চিন্তা করে বাসাবাড়িতে ক্যাবল সিলেকশন করা জরুরী। 
এক্ষেত্রে ঐ বিল্ডিং বা বাড়ির মালিক ভালো বলতে পারবেন ভবিষ্যতে তার কি ধরনের লোড বাড়তে পারে বা বিল্ডিংটির কত তালা পর্যন্ত বাড়বে।
এই লোড বৃদ্ধির পরিমাণ অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে আর যদি কোন কারনে না হওয়া যায় তাহলে ২০% অতিরিক্ত লোড ধরে নিতে হবে।২০% অতিরিক্ত লোড ধরে নেওয়া আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত।
তাহলে একটা হিসাব করা যাকঃ
ধরি, মোট পাওয়ার, P = ৫৩০০ ওয়াট। ভোল্টেজ V = ২২০ ভোল্ট। পাওয়ার ফ্যাক্টর, cosθ=০.৯। অতিরিক্ত লোড = ২০%
সর্বোমোট লোড পাওয়ার, P= {৫৩০০+(৫৩০০*২০/১০০)}=৬৩৬০ ওয়াট
মোট কারেন্ট, I =(P/vcosθ)={6360/(220*0.9)}=32.12A
লোড কারেন্ট নির্ণয় শেষ, এবার পরের ধাপ।
ওয়্যারিং পদ্ধতি ও ক্যাবল নির্ণয়
বাসা বাড়িতে আমরা সিঙ্গেল ফেজ লাইন নিয়ে কাজ করছি। তাহলে আমাদের দুটি তার টানতে হবে। এই তার কিভাবে টানতে হবে তার একটা প্রভাব আছে রেটেড এম্পিয়ারের উপর।
আমরা জানি, ক্যাবলের ভিতর দিয়ে কারেন্ট গেলে ক্যাবল গরম হয় আর এই উত্তাপ যত ছড়িয়ে পরবে তত ভালো কারন এতে করে ক্যাবল খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হবে। যে তার ছিদ্রযুক্ত ট্রের উপর দিয়ে টেনে নেওয়া হচ্ছে সেই তারটি যে পরিমাণ বাতাস পাচ্ছে, দেয়ালের ভিতর দিয়ে টানা তারটি সেই হিসেবে বাতাস পাচ্ছে না।
দেয়ালের বাহির দিয়ে কোন পাইপের মধ্য দিয়ে টানা তার কিছুটা বাতাস পাচ্ছে তবে তা ট্রের উপর দিয়ে টানা তার থেকে কম। এটাই মূলত ওয়্যারিং এর প্রভাব।
ধরি আমরা তার টানবো দেয়ালের ভিতর দিয়ে। তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের ক্যাবল লাগবে ৬ স্কয়ার মিঃমিঃ এর বা ৬ আর এম যার এম্পিয়ার রেটিং হচ্ছে ৩৪ এম্পিয়ার
এবার প্রশ্ন হতে পারে ৬ স্কয়ার মিঃমিঃ ক্যাবল লাগবে কেন??? উপরে একটি পিডিএফ বই দেওয়া আছে যেখানে বাসাবাড়ি বা ইত্যাদি স্ট্যান্ডার্ড ক্যাবল মান দেওয়া আছে।
পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা নির্ণয়
পরিবাহী ক্যাবলের আশেপাশে যা থাকবে তার ভিতর দিয়ে ক্যাবল তাপ নির্গত করতে চাইবে। এছাড়া ক্যাবলের আশেপাশে তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ক্যাবল কত দ্রুত ঠাণ্ডা হবে।
আমরা যেহেতু ক্যাবল টেনেছি দেয়ালের ভিতর দিয়ে যার তাপ পরিবহন ক্ষমতা খুব নিম্ম মানের। এর ফলে তাপ দেয়ালের ভিতরে থেকে যাবে ও পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
ধরি তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। তাহলে ৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে আমাদের কারেকশন ফ্যাক্টর নিতে হবে ০.৮৫ নিচে যা মার্ক করে দেখানো হয়েছে।
তারের সাইজ নির্ণয়
এবার আমরা ৩৪ এম্পিয়ার সাথে কারেকশন ফ্যাক্টর গুন করবো (৩৪*০.৮৫)=২৯ এম্পিয়ার। আমাদের লোডের মোট কারেন্ট প্রথমে দেখেছি ৩২.১২ এম্পিয়ার।
তাহলে এই ক্যাবলটি কোনভাবেই এত কারেন্ট বহন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমাদের ডাটা শিট থেকে আমাদের এক সাইজের উপরের ক্যাবল নির্ধারণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে ধরি, আমরা ১০ আর এম আর ক্যাবল নিলাম যার কারেন্ট বহন ক্ষমতা হচ্ছে ৪৬ এম্পিয়ার। তাহলে কারেকশন ফ্যাক্টর দিয়ে গুন করিঃ (৪৬*০.৮৭)=৪০.০২এম্পিয়ার। (যদি উপরের ছবিতে ৪৫ এম্পিয়ার এর জন্য ০.৮০ দেওয়া আছে তাই আমরা ৪৬ এম্পিয়ারের জন্য ০.৮৭ ধরে নিয়েছি)
আন্তর্জাতিক ক্যাবল কারেন্ট রেটিং বই অনুসারে ১০ আর এম ক্যাবলের কারেন্ট বহন ক্ষমতা ৪৬ এম্পিয়ার
লোডের মোট কারেন্ট ৩২.১২ এম্পিয়ার আর ক্যাবলের বহনকারী কারেন্ট সহ্য ক্ষমতা ৪০.০২ এম্পিয়ার। তাহলে এটাই পারফেক্ট।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আন্তর্জাতিক ক্যাবল কারেন্ট রেটিং বই অনুসারে ১০ আর এম ক্যাবলের কারেন্ট বহন ক্ষমতা ৪৬ এম্পিয়ার। এক্ষেত্রে BRB কিংবা BBS এস স্ট্যান্ডার্ড গ্রহন করা হয় নি। আপনি চাইলে BRB বা BBS এর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হিসাব করতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে BRB বা BBS অনুযায়ী হিসাব করবেন না।
ভোল্টেজ ড্রপ নির্ণয়
আমরা এখন বের করবো ফুল লোড কারেন্ট যাওয়া অবস্থায় ক্যাবলের ভিতর ভোল্টেজ ড্রপ কত হয়। এইজন্য আমাদের জানতে হবে এক এম্পিয়ার কারেন্ট যদি এক মিটার দীর্ঘ কোন নির্দিষ্ট ক্যাবল দিয়ে যায় তবে ঐ ক্যাবলে কত ভোল্টেজ ড্রপ হবে”
গবেষকরা বিভিন্ন আর এম ক্যাবলের জন্য এটা পরিমাপ করে দেখছেন ও তার চার্ট তৈরি করেছেন যা আমরা ইতিমধ্যে পিডিএফ বই দেখেছি। এই মানকে প্রকাশ করা হয় mV/A/M এই এককে।
তারের সাইজ নির্ণয়
আমরা মোট কারেন্ট পেয়েছিলাম ৩২.১২ এম্পিয়ার আর ব্যবহার করছি ১০ আর এম এর ক্যাবল যার ভোল্টেজ ড্রপ সিঙ্গেল ফেজের কারনে দেখতে পাচ্ছি ৪.২mV/A/M। ধরি ক্যাবলের মোট দৈর্ঘ ৩০ মিটার।
তাহলে ভোল্টেজ ড্রপ হবে = (৩২.১২*০.০০৪২*৩০)=৪.০৪৭১২ ভোল্ট
আবার IEEE এর নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পয়েন্ট থেকে কোন স্থাপনা পর্যন্ত ভোল্টেজ ড্রপ সাপ্লাই ভোল্টেজের ২.৫% এর চেয়ে যেন বেশি না হয়। তাহলে আমাদের সাপ্লাই ভোল্টেজ ২২০ ভোল্ট যার ২.৫% হয় ৫.৫ ভোল্ট যা ৪.০৪৭১২ থেকে বেশি।
এর মানে আমাদের ওয়্যারিং এর জন্য এই ক্যাবলটি ঠিক আছে। যদি কোন কারনে ভোল্টেজ ড্রপের মান অনুমদিত মানের থেকে বেশি হয়ে যায় তবে আমাদের আরও এক সাইজ বড় ক্যাবল নির্বাচিত করতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত না ২.৫% ভেতর না আসবে ততক্ষন পর্যন্ত ক্যাবলের মান বাড়তে থাকবে।

Comments

Popular posts from this blog

ওয়াট কি, কিভাবে নির্ণয় করে?ওয়াট কিভাবে মাপে?

এস,এম,রফিক ঃ ওয়াট (Watt):  সহজ ভাবে বললে ক্ষমতার একক হচ্ছে ওয়াট। আমরা জানি যে কোন যন্ত্র তা ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক কিংবা ম্যাকানিকাল হোক না কেন চলবার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। তেমনি ভাবে কোন যন্ত্র/লোড নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু শক্তি খরচ করে কোন কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে সে হিসাব কেই ওয়াট বলে। ওয়াট কিভাবে নির্ণয় করে? ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী DC এর ক্ষেত্রে- P = V×I = I 2 ×R = V 2 ÷R অর্থাৎ, P = V×I  অথবা P = I×R  অথবা P = V 2 /R এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়। ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী AC এর ক্ষেত্রে- P = V×I×P.F = I 2 ×R×P.F = (V 2 ×P.F)÷R অর্থাৎ, P = V×I×P.F   অথবা P = I 2 ×R×P.F   অথবা P = (V 2 ×P.F)÷R এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়। এখানে, P  =  Power  যার একক হলো  Watt   I  =  Current  যার একক হলো  Ampere V  =  Voltage  যার একক হলো  Volt R  =  Resistance  যার একক হলো  Ohm...

BRB/BBS এর স্ট্যান্ডার্ড আর এম অনুযায়ী কপার তার কত কারেন্ট বহন করতে পারবে?

এস,এম,রফিক ঃ ম্যাইনটেইনেন্স এ যারা কাজ করেন তাদের জন্য বিষয়টি জেনে রাখা খুব জরুরী। 1.3 rm = 22A 2.5 rm = 30A 4rm = 39A 6rm = 50A 10rm = 69A 16rm = 94A 25rm =125A 35rm = 160A 5orm = 195A 70rm = 245A 95rm = 300A 120rm = 350A 150rm = 405A 185rm = 460A 240rm = 555A 300rm = 640A 400rm = 770A 500rm = 900A 630rm = 1030A 800rm = 1165A 1000rm = 1310A